স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প কি ? স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পতে আপনার নাম আছে কিনা কিভাবে দেখবেন ? sasthya sathi prakalpa | Sastho sathi prokolpo.

 স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প ঃ-

সাস্থ্য সাথী প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  দ্বারা ৩০ শে ডিসেম্বর 2016 তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পে রাজ্যের সব মানুষ বিনা খরচে সরকারি স্বাস্থ্য বিমার সুযোগ পাবেন। সরকারি অন্য কোনো স্বাস্থ্য প্রকল্পে নাম নেই এরকম সকলের নাম এই প্রকল্পে তোলা হবে।

নাম তোলার পর এই প্রকল্পের একটি কার্ড দেওয়া হবে, সেটি হল স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। কার্ড টি শুধুমাত্র মহিলাদের নামেই হবে অর্থাৎ প্রত্যেক পরিবারের যিনি প্রধান মহিলা তার নামে হবে এবং পরিবারের আরও অন্যান্য সদস্যদের নাম নথিভুক্ত করা হবে, যে নামগুলি অনলাইনে চেক করলে তবে দেখতে পাবেন।

স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর সুবিধা  ও পরিষেবা  ঃ-

১।  কার্ডের মেয়াদ ১ বছর এবং প্রতি বছর পুনরায় নবীকরন করা যাবে।


২ । প্রতি বছর ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা মুল্যে চিকিৎসার সুবিধা প্রতি পরিবারে পাওয়া যাবে, যার খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার।


৩ । হাসপাতালে থাকাকালীন রোগীর সকল প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং সমস্ত ঔষধ পথ্য বিনামুল্যে দেওয়া হবে।


৪ । এই পরিষেবার অন্তর্গত পরিবারের সদস্য এবং ঐ পরিবারের সাথে যুক্ত নিরভরশীল সন্তান সদস্যের সংখ্যা এবং বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই।


৫ । হাস্পাতাল থেকে ছুটির সময় রোগীর গাড়ি ভারা বাবদ ২০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে এবং সরকারী হাসপাতালের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে।


৬ । এই পরিসেবা পাওয়া যাবে জেলার নতিভুক্ত সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ।


৭ । হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ সরাসরি হাসপাতালকে বীমা কোম্পানি দেবে পূর্ব নিরধারিত ব্যয়ের হার অনুযায়ী।


৮ । আই স্মার্ট কার্ডটি পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতে/ ব্লক অফিসে/ মিউনিসিপ্যাল অফিস থেকে ।


চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড গ্রাহক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করণীয় ঃ-

১। স্বাস্থ্য সাথী মবাইল এপ (APP) নিকটবর্তী হাসপাতালের তালিকা । GPRS – মাধ্যমে আপনার নিকটবর্তী হাসপাতালের নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন।


২।  URN নম্বর দ্বারা নিজের কার্ডের ব্যলেন্স ও Transaction সম্বন্ধে বিষদে তথ্য। হাসপাতাল, ডাক্তার ও এম্বুলেন্স সংক্রান্ত তথ্য।


 


৩।  নতুন এম্বুলেন্স নথিভুক্তকরনের সুবিধা। টোল ফ্রী নম্বরে সরাসরি কল করার সুবিধা। সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুবিধা।


৪।  উপভক্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য চিকিৎসা পাওয়ার জন্য স্মার্ট কার্ডটি নিয়ে নথিভুক্ত হাসপাতালে হেল্প ডেক্সে যোগাযোগ করতে হবে।


৫।  হাসপাতালের তালিকা বই সযত্নে হাতের কাছে রাখুন।


৬। কোন অবস্থাতেই স্মার্ট কার্ডটি পরিবারের নথিভুক্ত সদস্য ছাড়া অপর কোন ব্যক্তিকে হস্তান্তর করবেন না।


৭।  ভর্তি থাকা অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে স্মার্ট কার্ডটি দেবেন না। হাসপাতালে ভর্তি হবার সময় আপনার মোবাইল নম্বর অবশ্যই নতিভুক্ত করুন। ছুটির সময় যাতায়াত বাবদ নগদ বাবদ টাকা চেয়ে নিন, সংশ্লিষ্ট ভাউচার / রেজিস্টার খাতায় সই করুন বা টিপ ছাপ দিন।


৮।  হাসপাতাল থেকে ছুটির সময় আপনার স্মার্ট কার্ডটি সংগ্রহ করতে ভুলবেন  না।


৯।  কার্ডের অবশিষ্ট টাকা চিকিৎসার প্যাকেজ রেটের চেয়ে কম থাকলে বাকি টাকা রোগীকে দিতে হবে।


১০।  চিকিৎসার জন্য কত টাকা কম্পিউটারে ব্লক হল ( প্যাকেজ রেট ) জেনে নিন এবং চিকিৎসার পর কার্ডের অবশিষ্ট টাকার পরিমান জেনে নিন, ডিসচার্জ স্লিপ চেয়ে নিন।


১১।  জেনে রাখুন স্মার্ট কার্ড হারিয়ে গেলে নতুন কার্ড পাওয়া যায়, তবে উপভক্তাকে নতুন কার্ড তৈরীর খরচ বহন করতে হবে। এই সুবিধা পাওয়ার জন্য উপভক্তাকে জেলা কার্যালয় যোগাযোগ করতে হবে।


১২।  আপাতকালীন অবস্থায় স্মার্ট কার্ডটি আনতে ভুলে গেলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে কার্ড এনে জমা দিতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি না হলে স্বাস্থ সাথী প্রকল্পে ওষুধ পত্রাদি ও রোগ নির্ণয় বিনা মুল্যে পাওয়া যাবে।


১৩।  হাসপাতালে ভর্তি হবার সময় নিজের মবাইল আপনার ভরতির বিবরন এসএমএস মারফত জানতে পারবেন নম্বরটি নথিভুক্ত করাতে ভুলবেন না।


১৪।  হাসপাতালে ভর্তি হবার সময় আপনার নথিভুক্ত মোবাইল নম্বরে অভিযোগ জানানোর জন্য এসএমএস পাবেন। স্মার্ট কার্ডে নাম না থাকলেও নবজাতক শিশু ১ বছর পর্যন্ত এই পরিষেবার অন্তরভুক্ত হবে।


১৫।  স্মার্ট কার্ডের সুবিধা গুলি বছরে ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনামুল্যে স্বাস্থ্য বীমা ।


১৬।  স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলে জেলা, রাজ্য, এমনকি দেশের বিভিন্ন নথিভুক্ত হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামুল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে। ১৯০০ বেশি ধরনের প্যাকেজভুক্ত রোগের চিকিৎসা ।


১৭।  হাসপাতালে ভর্তির পূর্ববর্তী ১ দিন আর ছাড়া পাওয়ার ৫ দিন পর্যন্ত সমস্ত ঔষধ প্যাকেজে অন্তরভুক্ত।


১৮।  পূর্ববর্তী থাকা রোগ, এই স্বাস্থ্য বীমার অন্তরভুক্ত। (শরতাধীন)


১৯।  যাতায়াত বাবদ ৫০০ টাকা পর্যন্ত সরকারী হাসপাতালে এবং ২০০ টাকা বেসরকারী হাসপাতালের ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে। পরিবার সমস্ত সদস্য এই সুবিধা পাবেন।


২০।  কারা সামিল হবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা, চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ও নিম্নআয় প্রাপ্ত কর্মচারী যথা আশা কর্মী, অঙ্গনওইয়াড়ি কর্মী ও সহায়ক, সিভিক স্বেচ্ছাসেবক, নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য, এম জিএন আর ই জি এ, আনন্দধারা ও ডি আর ডি সি, পার্টটাইম টিচার , পি এম জি এস ওয়াই ।


২১।  হাসপাতালের দায়িত্ব ও কর্তব্য কার্ড হোল্ডারদের যথাযথ সন্মান দিন। রোগীর পরিচিতি যাচাই করুনঃ কম্পিউটার যন্ত্রে রোগীর ছবি, মোবাইল নম্বর ও আঙ্গুলের ছাপ নিন।


২২।  কোন পরিবার স্বাস্থ্য সাথীর অন্তর্ভুক্ত না থাকলে রোগীকে বা রোগীর পরিবারের সদস্যকে বুঝিয়ে বলুন, প্রয়োজনে ডিস্ট্রিক কিয়স্ক বা টোল ফ্রী নম্বরের সাথে যোগাযোগ করতে বলুন।


২৩।  ছুটির সময় রোগীকে যাতায়াত বাবদ প্রাপ্য নগদ টাকা দিন। রোগীকে স্বাস্থ্য সাথী স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ভর্তির সময় নির্দিষ্ট রোগের প্যাকেজ এর টাকা ব্লক করুন এবং Online Preauthorization – এর জন্য আবেদন করুন।


২৪।  ছুটির সময় স্বাস্থ্যা সাথীর স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করুন, ডিসচার্জ স্লিপ, রোগী বা রোগীর পরিবারের সদস্যকে দিন এবং আপনার কাছে রাখা ডিসচার্জ স্লিপে রোগী বা রোগীর পরিবারের সদস্যের স্বাক্ষর গ্রহন করুন।


২৫।  রোগীকে বিনা মুল্যে খাবার দিন। ছুটির সময় রোগীকে যাতায়াত খরচা বাবদ ৫০০ টাকা পর্যন্ত দিন।


২৬।  রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার পরের ৫ দিনের অউসধ পত্রাদি বুঝিয়ে দিন। ছুটির সাথে সাথে রোগীকে বা রোগীর পরিবারের সদস্যকে স্বাস্থ্য সাথী স্মার্ট কার্ড দিয়ে দিন।


২৭।  রোগী বা পরিবারের সদস্যকে স্মার্ট কার্ড থেকে কেতে নেওয়া তাকার পরিমান ও অবশিষ্ট তাকার পরিমানের কথা জানান। কোন কারনে জান্ত্রিক গোলযোগ হলে রোগীর চিকিৎসার সুবিধার্থে TPA-র সাথে কথা বুলুন বা জেলা অথবা SNA-র সাথে যোগাযোগ করুন প্রতিদিনকার চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি নির্দিষ্ট Server-আ Upload করুন।


কারা বাদ পড়বেন স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প থেকে

১।  পরিবারের কোনো সদস্য যদি সরকার পোষিত স্বাস্থ্যবীমার (CGHS, WBHS, ESI, etc) উপভোক্তা হন তাহলে তারা এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন না।


২।  যারা সরকারি সংস্থা থেকে বেতন এর সাথে চিকিৎসা ভাতা (Medical Allowance) পান তারা এই প্রকল্পে যুক্ত হতে চাইলে চিকিৎসা ভাতা পাবেন না। যথা সরকারি পোষিত বিদ্যালয় , কলেজ পেনসনার ইত্যাদি।


কিভাবে আবেদন করবেন স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে?

দুয়ারে সরকার ক্যাম্প এ গিয়ে আপনাকে ফরম বি পূরণ করে জমা করতে হবে। সাথে খাদ্যসাথী কার্ড এর বা আঁধার কার্ড এর জেরক্স কপি জমা করতে হবে। ফর্ম এ সঠিক জায়গায় মোবাইল নং দেওয়া বাধ্যতামূলক।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন